Thursday, September 26, 2019

সর্বকালের সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাসক

সর্বকালের সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাসক


১. কিন শি হুয়াং (শাসনকাল : ২৪৭-২১০ খ্রিস্টপূর্ব)
খ্রিষ্টপূর্ব ২২১ সালে তিনি একীভূত চীনের প্রথম সম্রাট হন এবং কিং রাজবংশের প্রথম সম্রাট হিসেবে রাজ্য শাসন করেন। এই শাসক কুখ্যাত পরিচিত পেয়েছিলেন তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী পন্ডিতদের হত্যার জন্য এবং তার সমালোচনামূলক সকল বই পোড়ানোর আদেশের জন্য। চীনের প্রাচীরের প্রথম পরিকল্পনাকারী তিনিই। সম্রাট রাজ্যের প্রতিটি সক্ষম পুরুষদের প্রাচীর নির্মাণে পাঠিয়েছিলেন। দেওয়াল উঠল ঠিকই-তবে অজস্র প্রাণের বিনিময়ে। নির্মাণশ্রমিকদের অনেকেই অধিক পরিশ্রম এবং অপর্যাপ্ত বিশ্রাম-আহারে মৃত্যুবরণ করে। একদিকে যেমন কল্যাণকর অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিলেন অন্যদিকে বেপরোয়া রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। শেষ জীবনে অমরত্ব লাভের বড় সাধ ছিল সম্রাটের। সে জন্য সন্ধান করে বেরিয়েছেন অবিনশ্বর জীবনলাভে বিভিন্ন অলৌকিক ওষুধ। কথিত আছে, অমরত্ব লাভের আশায় পারদের তৈরি ভুল ওষুধ খেয়ে ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তবে বেচেঁ থাকাকালীন সময়েই নিজের সমাধিসৌধ নির্মাণ ছিলেন তিনি। জমকালো আয়োজনের সমাধিসৌধটির মেঝেতে পারদের জলাশয়, ছাদে হিরে আর রুপোর নক্ষত্র আর ছয় হাজারেরও বেশি টেরাকোট সৈন্যর মূর্তি। এর নির্মাণশৈলী গোপন রাখতে শ্রমিকদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।


২. ক্যালিগুলা (শাসনকাল : ৩৭-৪১ খ্রিষ্টাব্দ)
ক্যালিগুলা রোমান ইতিহাসের এক কলঙ্কিত নাম, অন্ধকার যুগের প্রতীক। রোমান সাম্রাজ্যের তৃতীয় রোমান সম্রাট ছিলেন তিনি। তার পুরো নাম গাইউস জুলিয়াস সিজার জারমানিকাস। ক্ষমতা পাওয়ার লোভে তিনি তরুণ বয়সে লিপ্ত হয়েছিলেন ষড়যন্ত্রে। সাম্রাজ্যের বৈধ উত্তরাধিকারী টাইবেরিয়াসকে তিনি কৌশলে হত্যা করিয়েছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরুতে তিনি তার সামাজ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ট্যাক্স উঠিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে উন্মাদের মতো হয়ে যান। অস্বাভাবিক আচরণ, অত্যাধিক খরচ, অত্যাচার, ধর্ষণ, খুনের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠেন। ধনীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম রাজনৈতিক প্রতারণার অভিযোগ আনতে পারলেই সমস্ত সম্পত্তি জবরদখল করে সম্রাটের কোষাগারে নিয়ে নিতেন। তিনি মৌরিতানিয়ার রাজা টলেমিসহ তার উত্তরাধিকারী মার্ক অ্যান্টনিকে রোমে ডেকে এনে হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি জবরদখল করেন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মৃত্যুদণ্ড দিতেন এবং তাদের পরিবারকে বাধ্য করতেন সেই মৃত্যুদণ্ড দেখার জন্য। এছাড়া নিছক আনন্দের জন্য নির্বিচারে মানুষ খুন করতেন। নির্যাতনের দৃশ্য দেখে পুলকিত হতেন। একবার বিচারিক প্রাঙ্গণে হত্যা করার মতো আর কোনো অপরাধী ছিল না। ক্ষুধার্ত পশুরা গর্জন করছিল। ক্যালিগুলা সৈন্যদের নির্দেশ দিলেন দর্শকদের হিংস্র পশুদের খাঁচায় ঠেলে দিতে। বোনদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ছিল এবং তাদের বাধ্য করতো অন্য পুরুষদের কাছেও নিজেদের সমার্পন করার জন্য। নিজে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তার ধর্ষণকামী স্বভাবের দরুন অন্যের বিবাহিত স্ত্রীদের সঙ্গে বিছানায় যেতেন। ক্যালিগুলা মাত্র চার বছর রোমান সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন। এই অল্প সময় শাসন করে তিনি স্বৈরাচারী, খুনি ও উন্মাদ সম্রাট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।
রোমান সভ্যতায় মৃত সম্রাটদের মূর্তি তৈরি করে পুজা করা হতো। কিন্তু ক্যালিগুলা চাইতেন বেঁচে থেকেই লোকে তাকে পুজো করুক। এজন্য নিজেকে তিনি একসময় দেবতা হিসেবে ঘোষণা করেন। এ উপলক্ষে উপাসনালয় নির্মাণ করেন। উপাসনালয়ে নিজের মূর্তি স্থাপন করার নির্দেশ দেন। রোমান দেবতাদের পোশাক পরে ক্যালিগুলা জনগণের সামনে আসতেন। রোমান উপাসনালয়ে পুজার জন্য নিজের মূর্তি বসানোর নির্দেশ দেন। তার অস্বাভাবিক আচরণে ক্ষেপে উঠে রোমান সিনেটসহ সব শ্রেণীর জনগণ। ক্যালিগুলা তার ইনসিটাটাস নামক প্রিয় ঘোড়াকে নিজের পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছিলেন। ৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি প্রক্টোরিয়ান গার্ডের ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে বেশিরভাগ রোমান সিনেটরের সমর্থন ছিল। ক্যালিগুলাকে প্রায় তিরিশ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। ক্যালিগুলার দেহরক্ষী ছিল। কিন্তু তারা আসার আগেই উন্মাদ সম্রাট নিহত হন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২৮ বছর। তার স্ত্রী এবং কন্যাকেও হত্যা করা হয়।


৩. আতিলা দ্য হান (শাসনকাল : ৪৩৪-৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দ)
ভাই খুন হওয়ার পর আতিলা দ্য হান হয়ে ওঠেন হুন জাতির শাসক। রোমান সাম্রাজ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমনকারীদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন পশ্চিম ও পূর্ব রোমান সাম্রাজের অন্যতম ভীতির কারণ। আতিলা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, অত্যন্ত নিপীড়ক শাসক ছিলেন। একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবেও তাকে দেখা হয় ইতিহাসে। এই দুর্ধর্ষ যোদ্ধার শাসনামলে হুনিক সাম্রাজ উরাল নদী হতে রাইন নদী এবং দানিউব নদী হতে বাল্টিক সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তিনি দানিউব নদী দুইবার পার হন এবং বলকান অঞ্চল লুট করেন, কিন্তু কন্সট্যান্টিনোপল দখল করতে ব্যর্থ হন। আতিলা রোমান গল (আধুনিক ফ্রান্স) জয় করারও চেষ্টা চালান। তিনি ৪৫১ খ্রিস্টাব্দে রাইন নদী পার হয়ে অরেলিয়ানাম (অরলিন্স) শহর পর্যন্ত মার্চ করে যান। এখানে কাতালোনিয়ান প্লেইন্স এর যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। এর কিছুদিন পরই তিনি ইতালি আক্রমণ করেন এবং উত্তর প্রদেশসমূহে ধ্বংসযজ্ঞ চালান কিন্তু রোম দখল করতে অসমর্থ হন। রোমানদের বিরুদ্ধে তার আরো অভিযান চালানোর পরিকল্পনা ছিল কিন্তু তার আগেই ৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে আতিলা মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর ব্যাপারে শোনা যায়, আগে থেকেই আতিলার নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা ছিল, তার ওপরে বিয়ের দিন রাতে অতিরিক্ত খাওয়া আর মদ্য পান করে নিজের ওপর তাল হারিয়ে ফেলেন এবং পরদিন সকালে তার নিজের রক্তে ডুবন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment

Dune: Part Two free watch and download

Dune: Part Two: A Must-Watch for Science Fiction Fans Are you ready to dive back into the captivating world of Arrakis? Dune: Part Two , th...